দেখা হলো মুঠোফোনে!
দুপুরের খামোখা খেয়াল
ঘাম ঝরা কোনও এক গ্রীষ্মের ছুটির দুপুরে, যে খেয়াল চেপেছিল হাফ-প্যান্ট পরা বালকের মনে, তাতো খামোখা-ই...
শনিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৪
পু ন র্মি ল ন 🍂
জীবন তুমি কিসে রচিত?
ষোল আনা জীবনের আট আনা শেষে
ন র ম্যা নে র বা ড়ি
নরম্যান আমার প্রতিবেশী। থাকতেন আমার বাড়ির ঠিক উল্টো দিকে বিশাল জায়গা নিয়ে। তাঁর বাড়িটা বেশ পুরানো ধাঁচের। এই পাড়ার অন্য বাড়ি গুলোর থেকে আলাদা। দেখেই বুঝা যায় এর বয়স হয়েছে। এই ষ্ট্রীটের হাতে গুনা কজন শেতাঙ্গ অজির মাঝে উনি ছিলেন একজন। প্রায় ৭৫ বছর একই বাড়িতে কাটিয়ে গত বছর এপ্রিল মাসে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। তাঁর অসুস্থ বউকে একা করে দিয়ে। অথচ আমার মনে হয়েছিল তাঁর বউই হয়তো তাকে রেখে একদিন এই পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চলে যাবে। সেটা ভাবলেই আমার মন খারাপ হতো। আমার সাথে প্রতিদিন তাদের দেখে হতো ঠিক সকাল ৬:৩০ মিনিটে। আমি ড্রাইভওয়েতে গাড়িটা রিভার্স করতাম অফিস যাবো বলে আর নরম্যান খুব সাবধানে বউ এর হাতটা ধরে রাস্তা পার হতেন প্রাত ভ্রমণের উদ্দেশ্যে। বেশ কিছুটা হেঁটে যখন বয়সের ভারে নুয়ে যাওয়া বউ আর হাঁটতে পারতেন না তখন তাকে একটা জায়গায় একা বসিয়ে, নিজে আরো একটুখানি হেঁটে আসতেন। আমাকে দেখলেই হাত তুলে সৌজন্য মূলক হ্যালো-হাই করতেন। মাঝে মাঝেই দেখতাম দুজনে মিলে বাগানের পরিচর্যা করছেন। দেখতাম নানা রঙের গোলাপ ফুটেছে সে বাগানে। তাদের বৃদ্ধ বয়সে একে অন্যের উপর নির্ভরতা ও ভালোবাসার আমি ছিলাম এক মুগ্ধ নীরব দর্শক। শুনেছি দুজনে মিলে বাড়িতে গড়ে তুলেছিলেন একটা গ্লাসহাঊস। পাশ্চাত্য দেশগুলোতে বেশীরভাগ মানুষই বার্ধক্যে ওল্ডেজ হোমে চলে যান। কিন্তু নরম্যান যান নি। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত নিজের বাড়িতেই থাকতেন। নিজে ড্রাইভ করতেন। বাজার করতেন। বাগান করতেন। বাড়ির পাশের বিশাল লোনটা মো করতেন। তাঁর ছেলে মেয়েদের খুব কমই আসতে দেখেছি এই বাড়িতে। এরই মাঝে গত বছর এপ্রিল মাসে একদিন শুনলাম নরম্যান হাসপাতালে ভর্তি আর তার কদিন পর জানতে পারলাম তাঁর ফিউনারেলের খবর।তারপর যখনই বাড়িটার দিকে তাকাই নরম্যানের কথা মনে পড়ে। প্রায় এক বছর হয়েছে নরম্যান গত হয়েছেন। নরম্যানের বউ নিশ্চয়ই এখন কোন ওল্ডেজ হোমে স্থানান্তরিত। উনাদের বাড়ির জিনিসপত্র গুলো কবেই ভাগ বাটোয়ারা করে ছেলেমেয়েরা এসে নিয়ে গেছে। তারপর একদিন বাড়ির সামনে সাইনবোর্ডে লাগানো হলো 'ফর সেল'। তারও কিছুদিন পর লেখা হলো 'সোল্ড'। আজ দেখলাম "ফর লীজ"। এর কিছুদিন পর হয়তো ভাড়াটে আসবে। তারও কিছুদিন পর বিল্ডার এসে বাড়িটা ভেঙ্গে অনেকগুলো ছোট ছোট বাক্সের মত ঘর বানাবে। যারা এখানে থাকতে আসবে তারা জানবে ও না এখানে নরম্যান ও তাঁর পরিবার প্রায় ৭৫ বছর ধরে যাপন করে গেছে গোটা একটা জীবন। তাদের একটা নিজস্ব গ্লাসহাউস ছিল। এই বাড়ির পুরুষ মানুষটা প্রতিদিন তাঁর বউ এর হাতটা সযত্নে ধরে প্রাতর্ভ্রমণ যেতেন। আর কারো মনে থাকুক বা নাই থাকুক আমি জানি আমার চোখের সামনে প্রায়ই ভেসে উঠবে একটা প্রায় জীবন্ত ছবি যেখানে বেলা শেষের দিনগুলোতে একটা হাত প্রগাঢ় ভালবাসায় ছুঁয়ে আছে আর একটা হাত পরম নির্ভরতায়।
বুধবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২২
ভাষাবিহীন ভালোবাসার বিশ্ববিদ্যালয়
কারা যেন বাড়ি করছে গগন চুম্বী আশায়
আমি তখন ব্যস্ত থাকি আরেক ভালবাসায়।
কলেজ
রোড পেরিয়ে একটু এগিয়ে গেলে রাস্তাটা দু দিকে চলে গেছে। এক দিকে বিবেকানন্দ রোড।
অন্যদিকে সৎসঙ্ঘ আশ্রম রোড। আশ্রম রোডটা একটু পেরিয়ে রাস্তার বা দিকে চলেগেছে একটা কাঁচা রাস্তা। এই রাস্তার একেবারে শেষ প্রান্তে হাতের ডান দিকে কবির ছোট্ট বাড়ি। তাঁরই এক কোণে চিতপটাং শুয়ে লিখে যেতেন সময় শরীর হৃদয়ের পঙক্তিমালা। তাঁর ভাষায় রাংতা
করতেন সোনা। এটাই কবি শক্তিপদ ব্রহ্মচারীর অনাড়ম্বর জীবনের আপাত ঠিকানা।
সালটা
১৯৯৪। তখন সবে স্কুলের গণ্ডী পেরিয়ে জিসি কলেজে পা রেখেছি। আমদের বরাক উপত্যকার
বহু কাঙ্ক্ষিত আসাম বিশ্ববিদ্যালয় গুটি গুটি পায়ে তাঁর পথ চলা শুরু করেছে।
বন্ধুদের বৈকালিক আড্ডায় সুস্মিতা সেন মিস
ইঊনিভার্সের খেতাব পেয়ে তখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। আমাদের চোখেমুখেও পৃথিবীটা পাল্টে দেয়ার স্বপ্ন। একটু আধটু লেখালেখিও
করছি। এখানে ওখানে ছাপা হরফে নিজের নামটা দেখতে পাচ্ছি। পড়ার
টেবিলে পাঠ্য বইয়ের থেকে বেশি জমা হয়েছে গল্প কবিতার বই। নিয়মিত যাই প্রেমতলার
বইয়ের দোকান আবাহনে। বই কেনার সামর্থ্য না থাকলেও নেড়ে চেড়ে দেখি হরেক রকম বই।
তখনো ইন্টারনেট আসেনি আমাদের শিলচর শহরে। তাই আবাহন আর বইয়ের
দোকানগুলোই ছিল আমাদের এই প্রান্তিক জনপদের সাথে বাইরের বিশাল বিশ্বের যোগসূত্র। সেই
সময়টাতেই কোন এক ছুটির দুপুরে আমার স্কুল শিক্ষক প্রসূন কান্তি
দেবের আদেশে সাইকেলে প্যাডেল মারতে মারতে চলে এলাম শক্তি স্যারের বাড়ি। এর আগে
কলেজে স্যারের বেশ কটা ক্লাস করে ফেলেছি। প্রথম দেখায় এই মানুষটাকে আর যাই হোক কবি
বা অধ্যাপক বলে কিছুতেই মনে হয়নি। মনে হয়েছিল রিটায়ার্ড কোন আর্মি অফিসার। ‘নেভার জাজ
এ বুক বাই ইটস কভার’, কারণ ‘লুক ক্যানবি
ডিসিবটিভ’। এই আপাত কঠিন চেহারার মানুষটার ভেতরে যে বইছে ভালোবাসার ফল্গুধারা, সে কথা যারা তাঁর সংস্পর্শে এসেছেন
তাদের টের পেতে বেশি দেরি হয়নি।
আমার
এই কবি স্যার কখনো কাউকে প্রাইভেট পড়িয়েছেন কিনা আমার জানা নেই। কিন্তূ আজ গর্ব করে বলতে
পারি আমি পড়েছিলাম। প্রাইভেট পড়ার বাহানায় স্যারের কাছকাছি আসার সৌভাগ্য হয়েছিল
আমার। বাংলা ছন্দের পাঠ আমার শক্তি স্যারের থেকেই নেয়া। কবিতার কী ও
কেন তাঁর কাছে থেকেই জেনেছিলাম সেই প্রথম যৌবনে। দুই অসম বয়সী
শিক্ষক-ছাত্রের ছুটির রবিবারের আড্ডায় উঠে এসেছে সাহিত্য, সংস্কৃতি, রাজনীতি, মানচিত্র,
কাঁটাতার, দেশভাগ। তিনি
বলতেন, আমি শুনতাম। স্যার ছিলেন ভিষণ আড্ডা
প্রিয়, অহমিকাহীন, সরল, নিপাট এক ভাল মানুষ ।
এই
ছুটির দুপুরে প্রাইভেট পড়া দিয়ে শুরু, কিন্তু স্যারের সাথে আমার সম্পর্ক আরও গভীরতা
পায় পরবর্তী সময়ে। এক দিন বললেন উনার মেয়ে কপোতাক্ষীর বিয়ে। আর আমার দায়িত্ব হলো চিঠি বিলি করা। নিমন্ত্রিত শহরের সব বিশিষ্ট বিদ্যজন । শহরের
ছোট বোড় অলিগলি ঘুরে বিয়ের চিঠি বিতরণ করতে
করতে চেনা হয়ে গিয়েছিল শিলচরের অনেক বিখ্যাত মানুষের বাড়ি। মনে পড়ে দৈনিক সাময়িক প্রসঙ্গ পত্রিকার সম্পাদক তৈমুর রাজা চৌধুরীর
মালুগ্রামের বাড়িতে তাঁর হাতে কপোতাক্ষীদির বিয়ের চিঠিটা তুলে দিয়েছিলাম আমি। সবাই মিলে খুব
আনন্দ করেছিলাম বিয়ের অনুষ্টানে। খুব সুন্দর একটা শীতের
রাত ছিল।শিলচরের বৃষ্টি বাদলহীন বিয়ের মৌসমের এই সময়টা আমার বড় ভাললাগার। মনে পড়ে হাইলাকন্দি থেকে আসা কবি বন্ধু সুজিৎ ভট্টাচার্য পুত্র লালনদার
সাথে খুব ভাব হয়ে ছিল সেই বিয়েতে। সবই আজ স্মৃতি।
শিলচরের পড়াশুনার পাট চুকিয়ে রুজি রোজগারের
আশায় অনেকের মত দূরপাল্লার ট্রেনে চড়ে
মহানগরের পথে পাড়ি দিয়েছি প্রায় দুই যুগ আগে কিন্তু এখনো স্মৃতিতে ভর করে ছুঁতে
পারি সেই ফেলে আসা দিনগুলি। আমাদের আমির গড়ে উঠার সময় সেটা।
মনে পড়ে স্যারের লেখা আর সান্নিধ্য আমাকে এতোটাই আলোড়িত করেছিল যে বাড়ি ফিরেই
গঙ্গা জলে গঙ্গা পূজার মতো করে, লিখে ফেলেছিলাম নিচের
কবিতাটি স্যার কে উৎসর্গ করে।
আপনি জন্মেছিলেন এমন একটি গ্রামে
যেখান থেকে শহর ছিল পঁচিশ মাইল দূরে
গ্রামের নামটি ভীষণ ‘অকাব্যিক, অনর্থক
ও বিচ্ছিরি’
তাই জানাতে সংকোচ, তবু ভাল, তবু প্রিয়।
আপনার শৈশব ঘিরে ছিল একটি নদির
গ্রন্থনা
নদীর নামটিও ভীষণ অবিশ্বাস্য, বিবিয়ানা।
আজ
প্রায় মধ্যবয়সে সূদুর অস্ট্রেলিয়ায় বসে আমিও খোঁজে ফিরি প্রিয় নদী বরাক-জিরি-চিরি। ফারাক
একটাই আমাদের প্রজন্ম দেশান্তরী হচ্ছে অর্থনীতিক কারণে আর
শক্তি স্যারের প্রজন্ম পেছনে ফেলে এসেছিলেন সব দেশভাগের কারণে। আমাদের কারোই আর বাড়ি ফেরা হয়নি। আর হবেও না হয়ত।
শক্তি স্যারের চলে যাওয়ার
দিন বা তাঁর আশে পাশের সময়টাতে দিল্লীতে ছিলাম আমি। খবরটা পাই ফোনে প্রসূন স্যার মারফত। ইন্টারনেট
ঘেটে জানতে পারি শিলচরের মানুষ তাঁর শেষ যাত্রায় তাকে ভালোবাসায় ভাসিয়ে দিতে কার্পণ্য
করেনি। কবির শহর শিলচরের মানুষ উপছে পরেছে তাদের প্রিয় কবির অন্তিম যাত্রায়।
আমার ঈশ্বর নেই, আত্মা নেই, পরমাত্মা নেই
স্বর্গ ও নরক নেই, পুনরায় ফিরে আসা নেই
জন্মে গেছি এই সত্য, মরে গেলে ঘাসে ও মাটিতে
জলে ও বায়ুতে মিশে যাব, এর বেশি অভিপ্রায় নেই।
কবি
সেই কবে ঘাসে ও মাটিতে, জলে ও বায়ুতে মিশে
গেছেন কিন্তু আমাদের মেধা ও মননে আজও তাঁর কীর্তির অনুরণন
শুনতে পাই। প্রায় দশ বছর আগে স্যারকে বরাক উপত্যকার বাইরের বোদ্ধা
পাঠকের কাছে নিয়ে যেতে একটি ফেইসবুক পেইজ খুলেছিলাম, যা আমি ও কবি পুত্রী কপোতাক্ষীদি দুজনে মিলে এখনো চালিয়ে যাচ্ছি।
দেশ বিদেশের অনেক মানুষ জুড়েছেন সেই ফেইসবুকের পাতায়। সেখানে
তাঁর পাঠক আজও খোঁজ করেন তাঁর কবিতার। জানতে পারি তাঁর কাজ নিয়ে গবেষনা হচ্ছে দেশ বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে।
এইতো সেদিন বিখ্যাত কবি মলয় রায়চৌধুরী পেজে কোন আপডেট না দেখে জানতে চাইলেন পেইজে কেন
কোন আপডেট নেই। কবিকে ঘিরে এই ছোট ছোট ঘটনাপ্রবাহ তা আমাদের উৎসাহিত করে।
লেখার
শুরুতেই বলেছিলাম শক্তি স্যারের বাড়িতে যাওয়ার জন্য যিনি আমাকে আদেশ দিয়েছিলেন
তিনি হলেন আমার প্রবাদপ্রতিম শিক্ষক প্রসূন কান্তি দেব। পাবলিক উচ্চতর মাধ্যমিক
বিদ্যালয়ে পড়াকালিন সময়ে যার স্নেহ মমতায় বেড়ে উঠেছিলাম। শ্রেণীকক্ষে ও তার বাইরে
তিনিই ছিলেন আমার সত্যিকারের অভিভাবক।
আমার আর এক শিক্ষক অধ্যাপক বিশ্বতোষ চৌধুরী, আমার বিয়ের
অনুষ্টানে এসে বলেছিলেন, “আজ প্রসূন বাবুর দুই
ছেলের বিয়ে, একজন দেবব্রত আর অন্যজন পূন্যব্রত”। প্রসঙ্গত
প্রসূন স্যারের ছেলে পূন্যব্রত আর আমার বিয়ের তারিখ একই দিনে ছিল। তেমনি ছিল আমাদের ছাত্র-শিক্ষক
সম্পর্কের গভীরতা। যাই হোক, শক্তি স্যার আর প্রসূন স্যার ছিলেন
বয়সের দিক দিয়ে সমবয়সী, দুইজনেরই জন্ম
অবিভক্ত ভারতের শ্রীহট্টে।
“এখন ভূভারতে শ্রীহট্ট
নামে কোন জেলা নেই
এখন আমাদের জেলার নাম কাছাড়
আমাদের পশ্চিমের জেলার নাম করিমগঞ্জ
তারও পশ্চিমে একটা জেলার নাম সিলট
মানে সিলেট”
সেই
শ্রীভুমি শ্রীহট্টের দুই কৃতি সন্তান শিলচর শহরকে দেশভাগের পর আপন করে নিয়েছিলেন। আজ তাদের দুজনের কেউই নেই কিন্তু
তাদের মেধা ও মহৎ কাজের মাধ্যমে এই প্রান্তিক জনপদকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া জন্য
তাদের প্রচেষ্টা সেটা আজীবন স্মৃতিতে ভাস্বর হয়ে
থাকবে আমাদের মত গুনমুগ্ধদের
কাছে। একটা জনপদ মানে শুধু তাঁর ভৌগোলিক অবস্থান নয়। একটা জনপদ মহান হয়ে উঠে তাঁর
সাহিত্য, সংস্কৃতি আর মানবিক উৎকর্ষতায়। ভাবছেন শক্তি স্যারের
কথা বলতে গিয়ে কেন প্রসূন বাবু কে টেনে আনলাম। তাঁর কারণ তাদের দুজনের অকৃত্রিম
বন্ধুত্ব, যা আজকাল আর চোখে পড়ে না। এখন যখন দেখি মানুষ মানুষে
দূরত্ব বাড়ছে। হচ্ছে রাজনৈতিক মেরুকরন। সেই
সময়ে দাঁড়িয়ে আমার খুব মনে পড়ছে এই দুই মহান ব্যাক্তির
ঈর্শনীয় বন্ধুত্ব। একজন ছিলেন পাক্কা কমিউনিষ্ট
আর অন্যজন ধর্মঅন্ত প্রাণ। একজনের প্রভাবে ছুটে গিয়েছিলাম রামকৃষ্ণ মিশনে আর অন্য
জনের প্রভাবে দেখতাম দিন বদলের স্বপ্ন। একেই বলে দ্বন্দ্ব অহর্নিশ। শক্তি স্যারের
জীবিত কালের সব থেকে শেষের যে বইটি প্রকাশিত হয়ে ছিল তাঁর নামও ছিল সম্ভবত
দ্বন্দ্ব অহর্নিশ। শক্তি স্যার এই বইটি উৎসর্গ করেছিলেন
বন্ধু প্রসূনকে। উৎসর্গ পত্রে লিখেছিলেন, “বরাক
উপত্যকার বিশিষ্ট সংস্কৃতি সেবী ও সাহিত্যমনস্ক ব্যক্তিত্ব শ্রী প্রসূন কান্তি দেব
প্রিয় বরেষু”। তাদের রাজনীতিক বা ধর্ম বিশ্বাস কখনোই
তাদের বন্ধুত্বের মাঝে দেয়াল হয়ে ওঠেনি। যৌথ ভাবে কাজ করে
গেছেন বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন কে বরাক উপত্যকার আত্মপরিচয়ের
প্রতিনিধিত্বশীল সংঘঠন হিসেবে গড়ে
তুলতে।
দশটি ভাই চম্পা আর একটি পারুল বোন
কলজে ছিঁড়ে লিখেছিল ‘এই যে ঈশান কোণ—
কোন ভাষাতে হাসে-কাঁদে কান পেতে তা
শোন’
আজ
বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন অনেক বড় সংঘঠন। যাদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও নেতৃত্বে এই সংঘঠন গড়া তাঁরা আমাদের নমস্য।
জীবনের
শেষ দিনগুলোতে যখন চলতে ফিরতে পারতেন না শক্তি স্যার বন্ধু প্রসুনের পথ চেয়ে বসে
থাকতেন। যখন আর পারছেন না তখন ফোন করে বলতেন, “কেমন আছো? সুস্থ ত, কবে আসবে”।
অমন উপুড় করা ভালোবাসায় হৃদয় ভরা থাকলেই হয়তো লিখা যায় –
আমরা প্রত্যেকটা মানুষ দুঃখী ভিতরে
ভিতরে
কিন্তু কেউ কারো দুঃখকে ছুঁতে পারি না
আমরা প্রত্যেকটা মানুষ সুখী ভিতরে
ভিতরে
কিন্তু কেউ কারো সুখকে ছুঁতে পারি না।
জীবনের শেষদিন গুলোতে বন্ধু প্রসূন সব
থেকে বেশী সময় দিয়েছেন কবিকে। জীবন সায়াহ্নে দুই বন্ধু কি গল্প করতেন? খুব জানতে ইচ্ছে করে। অনুমান করতে পারি তাদের আড্ডার বিষয় যাই হোক না
কেন তা এক কথায় প্রকাশ করলে হয়তো দাঁড়াবে – ‘ভালবাসো, অন্তর থেকে বিদ্বেষ বিষ নাশো’’।
১লা ফেব্রুয়ারি শক্তি স্যারের সতেরতম প্রয়াণ দিবস। এই দিনে কামনা এই যে আমরা যেন অন্তর থেকে বিদ্বেষ বিষ কে সমূলে উপড়ে ফেলতে পারি । বাগানে বৈচিত্র্য থাকুক। লাল গেরুয়া সবুজ যে রং আমাদের প্রিয় হোক না কেন মানুষ হিসেবে মানুষের প্রতি ভালোবাসাটা যেন অটুট থাকে। মানুষে মানুষে বন্ধন ও সম্প্রীতির আলো হাওয়ায় বরাক উপত্যকা সামনের দিকে এগিয়ে যাক। কবিকে আমার সশ্রদ্ধ প্রণাম।
সিডনি | অস্ট্রেলিয়া
| ২৬.০১.২০২২
বৃহস্পতিবার, ২১ এপ্রিল, ২০২২
হিন্দু স্টুয়ার্ট
কলকাতা মহানগরী। ২০১১ -র এপ্রিল। ব্যাক্তিগত কাজে একাই আসা। হাতে ছিল কিছুটা অবসর সময়। তাই সচরাচর যা করা হয় না তাই করেছি। ফুটপাতে বসে মাটির ভাঁড়ে চা খেয়েছি। নৌকা করে বেলুড় থেকে গেছি দক্ষিণেশ্বর। রাস্তার ধারের সস্তা হোটেলে খেয়েছি মাছ-ভাত। বাসে ট্রামে করে কলকাতার পথে প্রান্তরে চষে বেরিয়েছি, গল্প-উপন্যাসে পড়া কলকাতা তিলোত্তমাকে খুব কাছে থেকে দেখবো বলে।
প র বা সে ন ব ব র্ষ
প্রবাসে দৈবের বশে এবার পনেরো বছর পূর্ণ হলো আমাদের। মনে পড়ে পনেরো বছর পূর্বে বাংলা নববর্ষের একদিন আগে দূরগামী উড়ুজাহাজে চড়ে পা-রেখেছিলাম ত্তশেনিয়ার এই দ্বীপ রাস্ট্র অস্ট্রেলিয়ার সিডনি শহরে। হঠাৎ করেই চাকরিটা পেয়ে চলে আসা। এটিই হলো আমাদের মানে আমি এবং আমার স্ত্রীর প্রথম বিদেশ যাত্রা। কখনো ভাবিনি এই শহরটাই একদিন হয়ে উঠবে আমাদের স্থায়ী ঠিকানা। বরাক উপত্যকার আলো-হাওয়া-রোদ্দুরে বেড়ে ওঠা এই সদ্য বিবাহিত বাঙালি দম্পতির কাছে তখন এদেশের সব কিছুই ছিল নতুন। যানজটহীন-ঝকঝকে-তকতকে-রাস্তাঘাট দেখে আমাদের বিস্ময়ের সীমা ছিল না। কালক্রমে সেই প্রথম দেখার বিস্ময় আজ অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
রবিবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৮
বাঙ্গালীর ইতিহাস আদি পর্বঃ ইতিহাসের ইঙ্গিত
পু ন র্মি ল ন 🍂
দেখা হলো মুঠোফোনে! 'জীবন গিয়েছে কুড়ি-কুড়ি বছরের পার'! না তার থেকেও বেশী হবে? ফিরে ফিরে আসে কাঠালতলা-কুসুম ভোর, মনপড়ে বয়েস হোষ্ট...
-
সপ্তডিঙা মধুকর চারিদিকে জল শ্রাবণের অবিশ্রাম মনসা-মঙ্গল পচা পাটে এঁদো ডোবা বিষধর ফণা ছেঁড়া কাঁথা-কাণি আর বাহুলা-যন্ত্রণা হ...
-
অস্ট্রেলিয়ার সিডনি শহরের বৈশাখী মেলাটি পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের বাইরে পৃথিবীর বৃহত্তম বাঙালির মিলনমেলা। প্রতি বছরই মেলার জন্য অপেক্ষায় থাক...