শনিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৪

পু ন র্মি ল ন 🍂

 দেখা হলো মুঠোফোনে!

'জীবন গিয়েছে কুড়ি-কুড়ি বছরের পার'!
না তার থেকেও বেশী হবে?
ফিরে ফিরে আসে কাঠালতলা-কুসুম ভোর,
মনপড়ে বয়েস হোষ্টেল, ফ্রেসার্স ফেষ্ট।
কথা হয় এক সুন্দরী অধ্যাপিকার যাকে দেখে
পদ্য লিখেছিল তাহাদের বন্ধু দিবাকর!
'দেখা যদি হল, সখা, প্রাণের মাঝে আয়'- গেয়ে গেলো
কেউ মনে মনে। কেউ কেউ বললো রবি ঠাকুর না থাকলে আমাদের যে কী হত।
আবার তাদের মাঝে কেউ কেউ 'হতেছে একেলা নিজেরই স্বভাব দোষে'।
কেউ বিরহে বিলীন, কেউ বা ঈর্ষায় নীল।
প্রেম-বিরহ-বৈরাগ্য নিয়ে আনমনে কিছু বলে গেলো একজন, এক উদাসী দুপুরে।
মধ্যরাতে তাদেরই একজন বলে উঠল, 'না রে আমি এই জীবন চাইনি। আমার সাথে তোদের জীবন বদল করবি?'
আজ কেহ ডাক্তার , কেহ পড়ায় দর্শন, কেহ চায় তার কথা একজন খুব মনোযোগ দিয়ে শুনুক!
কেউ ভাবে রমা রায়ই সব থেকে সুখী আছে,
কেউ ভাবে বৃথা এই জীবন, আমি কার কে আমার!
একদল সমস্বরে বলে,
বাকি জীবনটা এমনি কাটুক না হেসে-খেলে!
হায় মধ্যবয়সের পুনর্মিলন!
তাহাদের কেউ কেউ আজও হৃদয় খুঁড়ে,
যেন নিজের সাথে নিজেরই আলাপন।

জীবন তুমি কিসে রচিত?

ষোল আনা জীবনের আট আনা শেষে

জিজ্ঞেস করি নিজেকে এই প্রথম বার
জীবন তুমি কিসে রচিত?
কিছু সত্যিকারের অনুভূতি
কিছু মিথ্যে কথার প্রতিশ্রুতি
কিছু তার পাওয়ার সুখে
কিছু কথা না রাখার দু:খে
কিছু তার বলে যাওয়া কথায়
কিছু তার না-বলা গোপন ব্যথায়
কিছু তার স্বপ্নপূরণে
কিছু তার স্বপ্নভঙ্গে
কিছু তার জলের মত স্পস্ট
কিছু তার ধোঁয়াশা এখনও
কিছু তার স্বজনের ভালোবাসায়
কিছু তার প্রিয়জনের দেয়া জখমে
কিছু তার কঠিন প্রতিজ্ঞায়
কিছু তার নতজানু প্রার্থনায়
সব মিলে আমিই জীবন
তুমি যা দেখ স্মৃতির আয়নায়।

ন র ম্যা নে র বা ড়ি

নরম্যান আমার প্রতিবেশী। থাকতেন আমার বাড়ির ঠিক উল্টো দিকে বিশাল জায়গা নিয়ে। তাঁর বাড়িটা বেশ পুরানো ধাঁচের। এই পাড়ার অন্য বাড়ি গুলোর থেকে আলাদা। দেখেই বুঝা যায় এর বয়স হয়েছে। এই ষ্ট্রীটের হাতে গুনা কজন শেতাঙ্গ অজির মাঝে উনি ছিলেন একজন। প্রায় ৭৫ বছর একই বাড়িতে কাটিয়ে গত বছর এপ্রিল মাসে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। তাঁর অসুস্থ বউকে একা করে দিয়ে। অথচ আমার মনে হয়েছিল তাঁর বউই হয়তো তাকে রেখে একদিন এই পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চলে যাবে। সেটা ভাবলেই আমার মন খারাপ হতো। আমার সাথে প্রতিদিন তাদের দেখে হতো ঠিক সকাল ৬:৩০ মিনিটে। আমি ড্রাইভওয়েতে গাড়িটা রিভার্স করতাম অফিস যাবো বলে আর নরম্যান খুব সাবধানে বউ এর হাতটা ধরে রাস্তা পার হতেন প্রাত ভ্রমণের উদ্দেশ্যে। বেশ কিছুটা হেঁটে যখন বয়সের ভারে নুয়ে যাওয়া বউ আর হাঁটতে পারতেন না তখন তাকে একটা জায়গায় একা বসিয়ে, নিজে আরো একটুখানি হেঁটে আসতেন। আমাকে দেখলেই হাত তুলে সৌজন্য মূলক হ্যালো-হাই করতেন। মাঝে মাঝেই দেখতাম দুজনে মিলে বাগানের পরিচর্যা করছেন। দেখতাম নানা রঙের গোলাপ ফুটেছে সে বাগানে। তাদের বৃদ্ধ বয়সে একে অন্যের উপর নির্ভরতা ও ভালোবাসার আমি ছিলাম এক মুগ্ধ নীরব দর্শক। শুনেছি দুজনে মিলে বাড়িতে গড়ে তুলেছিলেন একটা গ্লাসহাঊস। পাশ্চাত্য দেশগুলোতে বেশীরভাগ মানুষই বার্ধক্যে ওল্ডেজ হোমে চলে যান। কিন্তু নরম্যান যান নি। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত নিজের বাড়িতেই থাকতেন। নিজে ড্রাইভ করতেন। বাজার করতেন। বাগান করতেন। বাড়ির পাশের বিশাল লোনটা মো করতেন। তাঁর ছেলে মেয়েদের খুব কমই আসতে দেখেছি এই বাড়িতে। এরই মাঝে গত বছর এপ্রিল মাসে একদিন শুনলাম নরম্যান হাসপাতালে ভর্তি আর তার কদিন পর জানতে পারলাম তাঁর ফিউনারেলের খবর।তারপর যখনই বাড়িটার দিকে তাকাই নরম্যানের কথা মনে পড়ে। প্রায় এক বছর হয়েছে নরম্যান গত হয়েছেন। নরম্যানের বউ নিশ্চয়ই এখন কোন ওল্ডেজ হোমে স্থানান্তরিত। উনাদের বাড়ির জিনিসপত্র গুলো কবেই ভাগ বাটোয়ারা করে ছেলেমেয়েরা এসে নিয়ে গেছে। তারপর একদিন বাড়ির সামনে সাইনবোর্ডে লাগানো হলো 'ফর সেল'। তারও কিছুদিন পর লেখা হলো 'সোল্ড'। আজ দেখলাম "ফর লীজ"। এর কিছুদিন পর হয়তো ভাড়াটে আসবে। তারও কিছুদিন পর বিল্ডার এসে বাড়িটা ভেঙ্গে অনেকগুলো ছোট ছোট বাক্সের মত ঘর বানাবে। যারা এখানে থাকতে আসবে তারা জানবে ও না এখানে নরম্যান ও তাঁর পরিবার প্রায় ৭৫ বছর ধরে যাপন করে গেছে গোটা একটা জীবন। তাদের একটা নিজস্ব গ্লাসহাউস ছিল। এই বাড়ির পুরুষ মানুষটা প্রতিদিন তাঁর বউ এর হাতটা সযত্নে ধরে প্রাতর্ভ্রমণ যেতেন। আর কারো মনে থাকুক বা নাই থাকুক আমি জানি আমার চোখের সামনে প্রায়ই ভেসে উঠবে একটা প্রায় জীবন্ত ছবি যেখানে বেলা শেষের দিনগুলোতে একটা হাত প্রগাঢ় ভালবাসায় ছুঁয়ে আছে আর একটা হাত পরম নির্ভরতায়।

পু ন র্মি ল ন 🍂

  দেখা হলো মুঠোফোনে! 'জীবন গিয়েছে কুড়ি-কুড়ি বছরের পার'! না তার থেকেও বেশী হবে? ফিরে ফিরে আসে কাঠালতলা-কুসুম ভোর, মনপড়ে বয়েস হোষ্ট...