নীরবতা
সাদা কাগজের নীরবতায় লুকিয়ে থাকে যে বেদনা তাকে উপমা হিসেবে দাঁড় করিয়ে কাব্য লেখার ইচ্ছে আমার নেই। ইসলামোফোবিয়া-সেফ্রনাইজেশন নিয়ে গুরুগম্ভীর আলোচনা কিংবা সমালোচনায় নেই কোন উৎসাহ। নিশ্চিত মৃত্যু যেনেও কালো কালো মানুষেরা কেন রিকেটি নৌকো নিয়ে পাড়ি দেয় ম্যাডিটেরেনিয়ানের জলে তা নিয়ে ভাবুক অন্য কেউ। সীমান্তের কাঁটা তারে গুলি খেয়ে পরে ছিল যে ফেলানি তাঁর অভিশাপে ও আমার কিছু আসে যায় না। আমি বরং আমার কথা বলি। ডিনার টেবিলে রাখা আমার চিকেন বিরিয়ানির সুগন্ধ তোমাকে ক্ষুধার্ত করুক। এসো,তোমাকে দেখাই আমার অবকাশ যাপনের ওপেন অ্যালবাম। তোমার ক্ষুধার্ত আর প্রতিহিংসায় নীল হয়ে যাওয়া মুখচ্ছবি তখন আমার কাছে কবিতা হয়ে উঠবে। সাদা কাগজের নীরবতায় লুকিয়ে থাকা বেদনার মতো কবিতা।
জুন ২৭, ২০১৫
সিডনি, অস্ট্রেলিয়া
ইচ্ছে ডানা
‘*যে উড়ে চলেছে, সে কেউ নয়, কিছু নয় - সে কেবল কবি’- জয় গোস্বামী*
ইচ্ছে করলেই লেখা যেত,
একটি মন ভাল করা প্রেমের কবিতা।
অলঙ্কারে-অনুপ্রাসে, নরম মোমের আলোয়,
লেখা যেত একটি রোমান্টিক
ক্যান্ডেল লাইট ডিনারের মনোরম বিবরণ।
ইচ্ছে করলেই ঝিলের মতো শান্ত বালিকা,
সকল নীরবতার অবসান ঘটিয়ে,
বৃষ্টি ভেজা শ্রাবণ দিনের রঙধনু হয়ে,
ঝরণার মতো হেসে যেতে পারত অকারণে।
ইচ্ছে করলেই বাঁধনহারা এক ঝাঁক শব্দ,
সাইকেল বালক হয়ে চলে যেতে পারত,
কলেজ রোডের ঐ বাড়িটার ধারে,
যার আকর্ষণ ছিল চুম্বকের চেয়েও বেশী।
কৈশোর ও যৌবনের সীমাহীন দারিদ্রতায়,
ভাড়া বাড়ীর জানলায় একা দাড়িয়ে,
সাবলীল চাঁদের জ্যোৎস্নায় ভিজতে ভিজতে,
আমাদের ইচ্ছে গুলো কখনও উড়তে শেখেনি।
আমরা কেউ কবি হতে পারিনি।
প্রজন্ম
হাটি হাটি পা পা করছে যে প্রজন্ম
তার কানে কানে বলেছি গতকাল,
আমাদের কোন মানচিত্র নেই,
আমাদের কোন পতাকা নেই,
আমাদের কোন নেতা নেই,
ছায়াপথের উজ্জ্বলতম নক্ষত্রটি
আমাদের কেউ নয়।
তাকে আরও বলেছি,
আমাদের গোয়াল ভরা গরু ছিল,
ছিল দিগন্ত বিস্তৃত ফসলের মাঠ,
ছিল সোনালী অতীত।
খুঁজে দেখো ধামাইলের সুরে,
রাধারমণের মন মুনিয়ায়।
গাঙ্গেয় ব-দ্বীপের বিস্তীর্ণতায়
খুঁজে দেখো,
আমাদের হারিয়ে যাওয়া পদচিহ্ন,
যদি ইচ্ছে হয়।
১৯শে জুলাই, ২০১১
বেঙ্গালোর, কর্ণাটক
শব্দগুচ্ছ
শব্দগুচ্ছ লিখে রাখো
যৌবন…উলটো হাওয়া…অস্থির সময়
রৌদ্রজ্জ্বল পাণ্ডুলিপি ম্যাচো হয়ে ওঠো
সঙ্গম এর উচ্চ শিখরে
স্খলনের শূন্যতা নয়, লিখে রাখো
অষ্টের স্বাদ…মাতাল নিঃশ্বাস…নখের আঁচড়
শ্রাবণ
শ্রাবণ আসে শ্রাবণ যায়,
ফ্ল্যাটবাড়ীর এই বারান্দায়।
কদমফুলের পাইনা দেখা,
বিশাল ঘরে থাকি একা ।
বৃষ্টি ঝরে অন্ধকারে,
মন চলে যায় বরাক পারে।
ডিস টিভিতে সবই আসে,
তবু তোমায় পাইনা কাছে ।
দূরে থেকেও পাশে থাকি ,
কুটুর কুটুর কিবোর্ড টিপি ।
১৬ই জুলাই, ২০১১
বেঙ্গালোর, কর্ণাটক
স্লেট-পেন্সিল
বহতা নদীর গ্রন্থনায়,
পাগলা গাজীর
স্কুলটা ছিল দেয়াল বিহীন,
তারপর অনেক গুলো
দুরগামী ট্রেন-বাস-উরুজাহাজ পেরিয়ে
অস্ফুট ইসারায় আজও ডেকে যায়
প্রথম ভাগের স্লেট-পেন্সিল।
মিত্রা দিদি
‘*ঝাউ গাছের পাতা, তোমার মিত্রা দিদি ভালতো শিলচরে?’ - জয় গোস্বামী*
মিত্রা দিদি, তোমাকে নিয়ে কাব্য
লেখেনি কোন পুরুষ কোন দিন।
গলির মোড়ে বাজেনি সম্মিলিত
শীৎকার, বখাটে ছেলেদের।
তোমাকে দেখতে আসেনি পাত্রপক্ষ,
এসেছিল শুধু মেপে নিতে,
তোমার বুক, চুল, নিতম্ব
যাবতীয় সব শারীরিক।
কত বার গেছ তুমি কামরূপ-কামাখ্যা ?
কত বার ছুঁয়েছ তুমি কাম পীঠে সিঁদুর ?
কত বার পালটেছ জ্যোতিষী তুমি ?
কত বার করিয়েছ জাদু-টোনা ?
কত যুগ উপবাসী তুমি ঢেলেছ দুগ্ধ,
সুগঠিত শিবলিঙ্গে ?
সে খবর জানে শুধু,
একলা রাতের পাশ বালিশ।
মঙ্গলবার, ২৬ জুলাই, ২০১১