শুক্রবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

পিমুলওয়ে



দক্ষিণ গোলার্ধের সুন্দরি সিডনি শহরের যে সার্বাবে আমার বাড়ি সেখানে এক সময়ে দাপিয়ে বেড়াত আদিবাসী মানুষেরা। যাদেরকে অ্যাবরিজিনাল বলা হয়। বর্তমান সময়ে এই এলাকাটা মূলত অভিবাসী ভারতীয় ও শ্রীলঙ্কান অধ্যুষিত। আদিবাসী কোথাও নজরে পরে না। কিন্তু এই এলাকার নামকরণে আদিবাসীদের ছোঁয়া রয়ে গেছে আজও। এই যেমন গিরাউইন, তুঙ্গাবি, উলুমুলু বা পিমুলুওয়ে সার্বাব। অ্যাবরিজিনাল ভাষায় ’গিরাউইন' মানে ফুলেদের দেশ, তুঙ্গাবি মানে জলের ধারের দেশ, উলুমুলু মানে ছোট্ট কালো ক্যাঙ্গারুর দেশ, ‘পিমুলুওয়ে' মানে 'পৃথিবী’। এই নান্দনিক নামগুলো শুনেই কৌতূহল হয় আদিবাসীদের জীবন ও ইতিহাস সম্বন্ধে।

২৬শে জানুয়ারি, ১৭৮৮ তে ইংরেজ ক্যাপ্টেন জেমস কুকের প্রথম নৌবহর নিয়ে অস্ট্রেলিয়াতে পদার্পণ করার মুহূর্তকে বলা যায় দেশটিতে পশ্চিমা ঔপনিবেশিকতার সূচনাকাল। তার আগে এখানে ছিল আনুমানিক ৫০০০০০ থেকে ৭৫০০০০ আদিবাসী। প্রায় ২৫০টি স্বতন্ত্র ভাষা নিয়ে তাদের ছিল স্বতন্ত্র আচার-আচরণ ও ভূখণ্ড। প্রায় চল্লিশ হাজার বছর ধরে আদিবাসীদের পদচারণায় গড়ে উঠেছিল যে বিচিত্র স্বতন্ত্র সংস্কৃতি তা কেপ্টেন কুক ও গভর্নর আর্থার ফিলিপের 'terra nullius' নীতিতে, যার অর্থ দাঁড়ায় 'land belonging to no-one', ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তারের স্বার্থে, প্রায় নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়। তাদের আগ্রাসী নীতি বাস্তবায়িত করতে সেখানে অভিবাসিত করা হয় ব্রিটিশ অপরাধীদের। কেঁড়ে নেয়া হয় আদিবাসীদের ভূমি। গুলি করে হত্যা করা হয় তাদের। নূতন অভিবাসীদের সাথে করে যে রোগগুলো নিয়ে এসেছিল শুধু তাতে করেই মারা যায় প্রায় ৬০ শতাংশ আদিবাসী। বর্তমানে তারা অস্ট্রেলিয়ার জনসংখ্যার ২.৪% মাত্র। নিজ ভূমে এখন তারা পরবাসী। দেশটির সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী। কেপ্টেন কুক অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে পা দেয়ার সাথে সাথেই আদিবাসীরা গর্জে উঠেছিল ‘ওয়ারা, ওয়ারা, ওয়ারা’ বা ‘চলে যাও চলে যাও’ বলে। যদিও ২৬শে জানুয়ারী দিনটি এখানে ‘অস্ট্রেলিয়া দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। কিন্তু এই দিনটি অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীরা এখনো আগ্রাসন দিবস হিসেবেই গণ্য করে। পরবর্তীকালে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে যে প্রচণ্ড প্রতিরোধ গড়ে উঠেছিল তার পুরোভাগে ছিল এক অসীম সাহসী কিংবদন্তী পুরুষ পিমুলওয়ে। যার নামেই সিডনির পিমুলওয়ে সার্বাব এবং রেডফার্নের পিমুলওয়ে পার্ক।

পিমুলওয়ে জন্মে  ১৭৫০ সালে বর্তমান নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের জর্জ নদীর উত্তরে বিদিজগাল জনগোষ্ঠীর এক পরিবারে। যারা ইওরা জাতি হিসেবে পরিচিত। ইওরা সমাজের মূল ভিত্তি বংশ পরম্পরা। এরা সম মাত্রিক ও অজড়বাদী। পূর্বপুরুষের সাথে রয়েছে এদের গভীর বন্ধন। ইওরাদের বাস সমুদ্র উপকূল অঞ্চলে এবং সামুদ্রিক মৎস্য ও অন্যান্য জীবজন্তু শিকার করে এঁদের জীবিকা নির্বাহ।

জন্ম থেকেই পিমুলওয়ের চোখে ছিল সমস্যা কিন্তু তা সত্ত্বেও এই মানুষটি তার প্রাত্যহিক কাজে প্রমাণ করছিল সে অন্য অনেক থেকে অনেকই এগিয়ে। ইওরা মানুষেরা তাকে জানতো 'বুদ্ধিমান মানুষ' হিসেবে। তার এলাকা তুঙ্গাবি ও পাররামাট্টার মানুষরা এই অঞ্চলের রীতিনীতি লঙ্ঘন করলে শাস্তির বিধান দিত সে। সবাই বিশ্বাস করত পিমুলুওয়ের রয়েছে অলৌকিক ক্ষমতা। অনেক কিংবদন্তী গল্প আছে তাকে নিয়ে। একবার নাকি সে কাক হয়ে উড়ে গিয়েছিল ব্রিটিশদের লোকাপ থেকে। তাই সে স্থানীয়দের মাঝে ’বুটুওয়াগন’ বা কাক হিসেবেও পরিচিত।

পিমুলুওয়ে শুধুমাত্র তার নিজের ইওরা ট্রাইব-ই নয় আশেপাশের ধারাগ, থারাওয়াল ট্রাইবকেও তার নেতৃত্বে সঙ্ঘবদ্ধ করতে পেরেছিল শ্বেতাঙ্গ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে। অনেকটা গেরিলা কায়দায় পিমুলয়াই  শ্বেতাংগ সাহেবদের ফসল ও গবাদি-পশুতে আগুন লাগিয়ে দিয়ে গভীর জঙ্গলে পালিয়ে যেত। ছয় ফুট উচ্চতার পিমুলুওয়ের ছিল অসীম সাহস আর বল্লমের অবার্থ নিশানা। তার যুদ্ধ ছিল প্রতিটি পশ্চিমা অভিবাসিতদের বিরুদ্ধে যারা দখল করেছিল তাদের জল ও মাটি। প্রায় ১২ বছর ধরে চোরাগুপ্তা হামলা চালিয়ে ইংরেজদের অবস্থা নাজেহাল করে তুলেছিল সে।

ভাষাবিহীন ভালোবাসার বিশ্ববিদ্যালয়

কারা যেন বাড়ি করছে গগন চুম্বী আশায় আমি তখন ব্যস্ত থাকি আরেক ভালবাসায়।   কলেজ রোড পেরিয়ে একটু এগিয়ে গেলে রাস্তাটা দু দিকে চলে গেছে। এক ...